ফজলি বা ফকিরভোগ (ভারতের বিভিন্ন স্থানে এই নামেও পরিচিত) মৌসুমীফল আমের একটি প্রকারভেদ। এটি Anacardiaceae গোত্রের Mangiferaindica প্রজাতিভুক্ত। ভারতের মালদহ জেলা পৃথিবীর এই অন্যতম সেরা ফল ফজলি আমের জন্য ভৌগলিক সূচক বা ( Geographical Index,GI) লাভ করেছে।
নামকরণের ইতিহাসঃ নামে কিবা আসে যায় গুনে যার পরিচয়। তারপরেও নামকরণের ইতিহাসটা কে না জানতে চায়। ফজলি নামকরণ নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো-
- ১৮০০ খ্রি. মালদহের তৎকালীন কালেক্টর র্যাভেন সাহেব ঘোড়র গাড়ি চেপে গৌর যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তার তৃষ্ণা পেলে গ্রামের এক মহিলার কাছে পানি খেতে চান। ফজলু বিবি নামের সেই মহিলার বাড়ির আঙিনায় একটি বড় আম গাছ ছিল। ফজলু বিবি তাঁকে জলের বদলে একটি আম খেতে দেন। আম খেয়ে কালেক্টর সাহেব ইংরেজিতে তাঁকে আমের নাম জিজ্ঞাসা করেন। বুঝতে না পেরে ওই মহিলা তাঁর নিজের নাম বলে বসেন। সেই থেকে ওই আমের নাম হয়ে যায় ফজলি।
- এ বিষয়ে প্রচলিত আরও একটি কাহিনী হলো, পঞ্চদশ শতাব্দীতে সুলতান ইউসুফের বিশেষ কীর্তি জড়িয়ে রয়েছে ফজলি আমের সৃষ্টি সঙ্গে। সুলতানের প্রিয় নর্তকী ছিলেন ফজলবিবি। ইউসুফ তাঁর জন্য থাকার বাসস্থান করে দেন একেবারে আম বাগানের ভেতরে। ফজলি বিবির গৃহের পাশের বাগানে বড় বড় সাইজে আম ফলতে থাকে। তখন ফজলবিবির অঙ্গকে ব্যঙ্গ করে লোকে ফজল আম বলতে শুরু করে। সেই থেকেই ওই অঞ্চলে উৎপাদিত বড় আকারের আমগুলির নাম হয়ে যায় ফজলি আম।
ঊল্লেখ্য যে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শেষের কবিতা” উপন্যাসে ফজলি আমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ফজলি আম দক্ষিন এশিয়ার পূর্বদিক বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জ রাজশাহী, নওগা, নাটোর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরাসহ দেশের প্রায় সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে চাপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী অঞ্চলের ফজলি আম সব থেকে বিখ্যাত, প্রসিদ্ধ ও উন্নতমানের।
অন্যতম সেরা এই ফজলি আম সাধারণত গড়ে লম্বায় ১৩.৮ সে।মি, চওড়া ৯.৫ সেমি হয়। গড় ওজন সাধারণত ৬০০-৬৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। তবে একটি ফজলি আম ১ কেজি বা তার থেকেও বেশি ওজনের হতে পারে। ফজলি আম লম্বা, কিছুটা চ্যাপ্টা এবং খোসা পাতলা হয়ে থাকে। ছোট অবস্থায় ফজলি আম কালো সবুজ থেকে বড় হওয়ার সাথে সাথে গাড় সবুজ থেকে হালকা সবুজ হয়ে থাকে। পাকার সময় হলে গায়ের রঙ বিশেষত উপরের অংশ হালকা হলুদ হয়ে উঠে। শাস হলুদ, আশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও মিষ্টি। এই আমের মিষ্টির পরিমান গড়ে ১৭-১৮ শতাংশের কাছাকাছি। এই আমের খাদ্যাংসের পরিমান ৬০-৬৫ শতাংশ।
ফজলি আম মূলত জুলাই মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে পাকা শুরু হয় এবং আগস্ট মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত পাওয়া যায়। ফজলি আম চেনার সহজ উপায় হলো এই আম অন্য আমের থেকে বড় লম্বা এবঙ সুন্দর হয়ে থাকে। পাকা ফজলি আমের বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো দেখতে হলুদাভ হয়। পানিতে ডুবালে পরিপক্ক বা পাকা আম পানিতে ডুবে যায়। কাচা ও পাকা উভয় ফজলি আমাই ভিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।আমে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ ও সি রয়েছে। এ ছাড়া আমে ভিটামিন বি-১, বি-২, বি সিক্স বা পাইরিডক্সিন ও রয়েছে।